সকাল বেলা হাটছিলাম। নজরে পড়ল স্কুল ড্রেস পরিহিত চারজন শিক্ষার্থী একটি বিশালাকার বাঁশ বহন করে নিয়ে যাচ্ছে। খানিকটা আশ্চর্য এবং কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,বাবারা, বাঁশ দিয়ে কি করবে? কোথায় বা যাচ্ছো ? শিক্ষার্থীরা জানাল্ ‘আমাদের সিংগারদিঘী উচ্চ বিদ্যালয়ে যাচ্ছি,আমরা দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে নারিকেল গাছ লাগাব্’,হাটতে হাটতে শুনছিলাম কথাগুলো,খুব ভাল্ লাগল,বসলাম তাদের সাথে। জানতে চাইলাম বৃক্ষ রোপনে তাদের আগ্রহের কারণ তারা জানায়- ইংরেজী শিক্ষক বৃক্ষ রোপন অনুচ্ছেদটি পড়ানোর সময় তারা সিদ্ধান্ত নেয় বিদ্যালয়ে তাদের স্মৃতি রাখার জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে পাঁচ হাজার টাকা উত্তোলন করবে, চারা ক্রয় ও বেড়া দেওয়ার জন্য। দ্বিতীয় পর্যায়ে যত দিন গাছে ফল না আসবে ততদিন তারা গাছের পরিচর্চা করে যাবে নিজ খরচে। শিক্ষার্থীদের কথাগুলোা গভীর মনোযোগে শ্রবণ করতে করতে বৃক্ষের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করছিলাম।
ফুল গাছের ফুলের সৌন্দর্য মনকে মুগ্ধ করে। ফল গাছের ফলের প্রাচুর্য মানুষের পুস্টি যোগায়। কাঠগাছ রাস্তায় কিংবা দ্বারের কাছে দাঁড়িয়ে ছায়া দেয়। অকাজের গাছটি জ্বালানি হিসাবে জীবন বিসর্জন দিয়ে মানুষের উপকার করে যায়। গাছের ত্যাগ করা অক্সিজেন মানুষের প্রাণ ধারণের জন্য সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। শিল্পের নানা উপাদানে গাছ ও তার ফল ব্যবহ্নত হয়। গাছের সীমাহীন গুরুত্বের প্রেক্ষিতে বিবেচনা করলে দেখা যাবে আমাদের বনের অবস্থা নৈরাজ্যজনক। বিখ্যাত সুন্দর বন আমাদের দীর্ঘ ঐতিহ্যের অধিকারী কিন্তু এখন আর সুন্দর বনের সেই দৃষ্টি নন্দন সৌন্দর্য তেমন নাই। ভাওয়ালের শাল,গজারী প্রায়ই ধ্বংসের উপক্রম ,মধুপুর আর সিলেটের বনের অবস্থাও ধবল রোগীর মত। পাবর্ত্য জেলা সমূহের বনের অবস্থা আজ আর কারো অজানা নয়। এ যেন এক মরণ ফাঁদে পরিনত হয়েছে। নির্বিচারে বৃক্ষ কর্তনে প্রতিনিয়তই ঘটছে পাহাড় ভাঙ্গনের ঘটনা ,ধ্বংস হচ্ছে হাজার হাজার বসত বাড়ি,প্রাণ হারাচ্ছে অসংখ্য মানুষ। বাংলা হারাতে বসেছে তার চিরচেনা রুপ।
সম্প্রতি মিয়ানমারের পশ্চিম রাখাইন প্রদেশের বাংলাদেশ মিয়ানমার সীমান্ত পথে লক্ষ লক্ষ মুসলিম রোহিঙ্গারা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশের পার্বত্য বনাঞ্চলে প্রবেশ করে যেভাবে বন উজার করে বসত বাড়ি গড়ে তুলছে এবং পরবর্তী সময়ে জ্বালানী ও জীবন নির্বাহের জন্য এরা কি পরিমান বৃক্ষ নিধন করবে তা কল্পনার বাইরে। অথাৎ চট্রগ্রামের পাহাড়ি বনের অবস্থাও করুণ। অথচ আবহাওয়াবীদগণ বলছেন প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার জন্য দেশের আয়তনের এক-চতুর্থাংশ বনাঞ্চল থাকা জরুরী। আমাদের রয়েছে ১২-১৫ ভাগ। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এই সংখ্যা নিম্নগামী। আর একারণেই নানাবিধ প্রাকৃতিক বিপর্যয় আমাদের নিত্য দিনের সঙ্গী।
এখনই বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে ভাবা দরকার তা না হলে এক সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগ আরো অধিক হারে বেড়ে যেতে পারে, যা আমাদের জাতীয় জীবনে বিশাল হুমকি স্বরুপ। সরকারী উদ্যোগে বিভিন্ন মন্ত্রনালয়,বন বিভাগ,সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠান ,সপ্তাহ,পক্ষ এবং মাসকালীন ব্যাপি বৃক্ষ রোপন অভিযান পরিচালনা করলেও বাস্তবে সফলতা কতটুকু ? বৃক্ষ হস্তান্তরের পর রোপনই বা করা হয় কয়টি? যে কয়টি রোপিত হয় তার রক্ষনাবেক্ষন কি হচ্ছে? সত্যিকারার্থে বৃক্ষ রোপনের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য বা বাস্তবায়ন হয় না মূলত: ছবি তোলা আর মিডিয়ার দৃষ্টি আর্কষণের জন্যই অধিকাংশ বৃক্ষ রোপন অভিযান। আমরা কাকে ফাঁকি দিচ্ছি ? আমরা তো নিজেদের সর্বনাশ নিজেরাই ডেকে আনছি। গাছ আমাদের পরম বন্ধু। গাছের তৈরী অক্সিজেন গ্রহণ করেই তো আমরা বেচেঁ আছি। গাছ লাগাতে হবে নিজের স¦ার্থে। জাতীয় বৃহত্তর কল্যাণে। নির্জীব অরণ্য পালদের সক্রিয় করতে হবে। বৃক্ষ রোপনে সরকারী উদ্যোগে জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের আন্তরিকতাই পারে আমাদের কাঙ্খিত অরণ্য ফিরিয়ে আনতে।
আবুল কালাম আজাদ- শ্রীপুর,গাজীপুর।