আজকে যে শিশু, কালকে সে যুবক, তার পরে সে বৃদ্ধ এভাবেই চলে একটি মানুষের জীবনচক্র। তার পরে পরিণত বৃদ্ধ বয়সে মানুষের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়ে থাকে। জ্ঞানবিজ্ঞানের উৎকর্ষ সাধনের ফলে মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে। প্রবীণদের সংখ্যাও বাড়ছে। বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ১০ ভাগেরও বেশি প্রবীণ। আর বাংলাদেশে ৬০ বছর বা তার ঊর্ধ্বের ব্যক্তিকে প্রবীণ হিসেবে গণ্য করা হয়। সে হিসাবে এ দেশের প্রায় এক কোটি ৪০ লাখ নাগরিক প্রবীণ। সময়ের হিসাবে মানুষ যতই প্রবীণ হয়, ততই তার জ্ঞান, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা বাড়তে থাকে; কিন্তু তখন কমতে থাকে স্মরণশক্তি, কর্মক্ষমতা, আয়, সিদ্ধান্ত গ্রহণে দৃঢ়তা, বাড়তে থাকে রোগব্যাধি ইত্যাদি। আর সে কারণেই সংসারে কমতে থাকে প্রবীণদের গুরুত্ব। দুঃখজনক হলেও সত্য, যে বাবা-মা এক সময় শক্ত হাতে সংসারের হাল ধরেছেন, জীবনের শেষ প্রান্তে এসে তাদের বোঝা মনে করছে অনেক সন্তান। তখন তাদের বৃদ্ধ বাবা-মায়ের ঠাঁই হয় প্রবীণ নিবাসে। আবার অনেক প্রবীণ পরিবারের সঙ্গে থাকলেও প্রতিনিয়তই বঞ্চনা ও বৈষম্যের শিকার হন। তাই এ বিষয়ে নবীনদের সচেতন করে তুলতে প্রতিবছর ১ অক্টোবর বিশ্ব প্রবীণ দিবস হিসেবে পালন করা হয়। দিবসটি যথারীতি এবারও পালিত হয়েছে। কিন্তু মানুষের মায়া-মমতা ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে। বাড়ছে বৃদ্ধাশ্রমের সংখ্যা। নিজের গড়া সংসার ছেড়ে সেগুলোতেই ঠাঁই হচ্ছে প্রবীণদের।
যে ব্যক্তিটি একসময় সংসারের সব দায়দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে তার মা-বাবা, ভাই বোন, স্ত্রী-সন্তানদের দেখভাল করেছেন, প্রবীণ বয়সে তাকেই সবচেয়ে করুণ অবস্থায় পড়তে দেখা গেছে। এমন চিত্রের পরিবর্তন জরুরি। সবার মধ্যে একটি বিষয় ছড়িয়ে দেওয়া দরকারÑ প্রবীণরা পরিবার, সমাজ কিংবা রাষ্ট্রের অভিশাপ বা বোঝা নয়, বরং তারা আশীর্বাদ। এটি একটি পারিবারিক ও সামাজিক সমস্যা। তাই একে সম্মিলিত ও সমন্বিতভাবে মোকাবিলা করতে হবে। আমাদের নৈতিক দায়িত্ব হওয়া উচিত, প্রবীণদের আদর-যতœ দিয়ে শিশুদের মতো প্রতিপালন এবং তাদের প্রতি মায়া, মমতা, ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা। তাদের সুরক্ষা এবং অধিকার নিশ্চিতের পাশাপাশি বার্ধক্যের বিষয়ে গণসচেতনতা সৃষ্টির বিকল্প নেই।