প্রাইম ডেস্ক :
সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের জাতিগত নিধন ও গণহত্যার অভিযোগ সত্ত্বেও সেনাবাহিনী ও সন্ত্রাসীদের লাগাম টেনে ধরতে ব্যর্থ মিয়ানমার সরকার।
এ অবস্থায় কর্তব্য পালনের প্রচেষ্টা না থাকলেও আন্তর্জাতিক চাপ এড়াতে মিয়ানমারের শিশু গণতন্ত্রকে ‘বেঁচে থাকার সুযোগ’ দেয়ার আবদার জানিয়েছেন দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা।
সোমবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দফতরে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি সুযোগের আবেদন জানান।
কিন্তু নোবেলজয়ী অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর এক বছরের মধ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর দুটি ভয়াবহ গণহত্যা চালিয়েছে সরকারি বাহিনী।
এ অবস্থায় নাগরিকত্ব বঞ্চিত রাখাইনের মুসলমানদের অস্তিত্ব রক্ষায় কর্তব্য পালনে নবীন গণতন্ত্রের কথা বলে কতটা সময় চায় মিয়ানমারের অভিযুক্ত সরকার?
মিয়ানমারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা থং টুন সাক্ষাৎকারে ইঙ্গিত দেন গণতন্ত্রের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য আসলে অনির্দিষ্ট মেয়াদের সময় চায় সরকার।
রাখাইনে গত ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের সঙ্গে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী পুলিশের সংঘর্ষ হয়।
এর জেরে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা গ্রামগুলো লক্ষ্য করে অভিযানের নামে গণহত্যা ও গণধর্ষণে লিপ্ত হয়। তারা চার হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গাকে হত্যা করেছে।
এ পরিস্থিতিতে প্রাণ বাঁচাতে রোহিঙ্গারা দলে দলে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। জাতিসংঘের হিসাবমতে, এ পর্যন্ত প্রায় সোয়া পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে পৌঁছেছে।
জাতিসংঘ মিয়ানমারের বিরুদ্ধে পাঠ্যবইয়ে লিখে রাখার মতো ভয়াবহ জাতিগত নিধন চালানোর অভিযোগ আনে।
তবে সেনা অভিযানে পাঁচশরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন এবং তাদের অধিকাংশকেই বিদ্রোহী বলে দাবি করেছে মিয়ানমার।
দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা থং টুন রয়টার্সকে জানিয়েছেন, তিনি ফোনে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এইচআর ম্যাকমাস্টারের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং গত সপ্তাহে ওয়াশিংটনে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের সদস্যদের দেখা করেছেন। তাদের সঙ্গে নিষেধাজ্ঞা নিয়ে বিশেষ কোনো কথা হয়নি বলে জানান তিনি।
মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীকে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ রাখতে অস্ত্র সরবরাহকারী দেশগুলোর প্রতি গত সপ্তাহে আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, কিন্তু মিয়ানমারের বিরুদ্ধে নিজেদের নিষেধাজ্ঞা পুনরায় আরোপ করার হুমকি দেয়া থেকে বিরত থেকেছে।
দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রশাসন মিয়ানমারের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করেছিল।
সাক্ষাৎকারে টুন বলেন, মিয়ানমারে গণতন্ত্র যেন বেঁচে থাকার সুযোগ পায় তা নিশ্চিত করতে হবে আমাদের। এটি নবীন একটি গণতন্ত্র।
মিয়ানমার সরকারের নেতারা এবং নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী অং সাং সু চি মাত্র ১৮ মাস ধরে ক্ষমতায় আছেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।
টুন আরও বলেন, আমাদের সামনে বহু চ্যালেঞ্জ এবং একদিনে এসব চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করা সম্ভব নয়। রোম একদিনে নির্মিত হয়নি। তাই ৫০ বছর ধরে চ্যালেঞ্জের মোকাবেলার বিষয়টি আমরা বাতিল করতে পারি না।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নিরাপত্তা উপদেষ্টা ম্যাকমাস্টারের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে সাক্ষাৎ করে তার কাছে ‘বর্তমান পরিস্থিতি’ তুলে ধরার আশা প্রকাশ করেছেন মিয়ানমারের এ প্রতিনিধি।
মিয়ানমারে কোনো জাতিগত নির্মূল অভিযান বা গণহত্যা চলছে না বলে সাক্ষাৎকারে দাবি করেছেন টুন।