রাজধানীতে চব্বিশ ঘণ্টার ব্যবধানে একটি লোকাল পরিবহন রূপান্তরিত হইয়াছে সিটিং সার্ভিসে। এই উপলক্ষে বাসভাড়া বাড়ানো হইয়াছে দ্বিগুণ। কিন্তু সার্ভিসের মান বৃদ্ধি না পাওয়ায় এবং বাসগুলি আগের মত লক্কড়ঝক্কড় থাকায় যাত্রীদের ক্ষোভ বাড়িতেছে। ইহা লইয়া বাসযাত্রী ও বাস স্টাফদের মধ্যে কথা কাটাকাটি এমনকি হাতাহাতির ঘটনাও ঘটিতেছে। সিটিং সার্ভিসের অর্থ হইল—ঐ বাসে কোনো অতিরিক্ত যাত্রী উঠানো হইবে না। প্রত্যেকের জন্য বরাদ্দ থাকিবে সিট। কিন্তু এইরকম বাসের বাসভাড়া নিয়া কোনো সরকারি নীতিমালা না থাকায় অনেকে স্বেচ্ছাচারিতার পরিচয় দিতেছেন। ইহার ভুক্তভোগী রাজধানীর সাধারণ যাত্রীরা। বাসভাড়া বাড়ান হইবে অথচ সার্ভিসের মান বাড়ান হইবে না—এমন নীতি মানিয়া নেওয়া যায় না কিছুতেই।
সমপ্রতি যাত্রী কল্যাণ সমিতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করিয়াছে। তাহাতে দেখা যায়, ঢাকায় চলাচলরত ৮৭ শতাংশ বাস-মিনিবাসই লক্কড়ঝক্কড় ও ঝুঁকিপূর্ণ। বহু বত্সর ধরিয়াই বাসগুলি মেয়াদোত্তীর্ণ। তাহার চাইতে বড় কথা হইল এই বাসগুলির বাজারমূল্য সর্বোচ্চ পাঁচ হইতে ১০ লক্ষ টাকা। অথচ ব্যাংকের সুদসহ ক্রয়মূল্য ৪৭ লক্ষ টাকা ধরিয়া এইসব যানবাহনের ভাড়া ঠিক করা হইতেছে। সেই ভাড়াও আবার মানা হইতেছে না ৯৬ শতাংশ বাস-মিনিবাসে। ইহা যে প্রতারণার শামিল তাহাতে কোনো সন্দেহ নাই। অন্যদিকে সিটিং সার্ভিসের নামে নৈরাজ্য ও যাত্রী হয়রানি নিত্যনৈমিত্তিক। ভুক্তভোগীদের অনেকে ইহাকে ‘চিটিং সার্ভিস’ নামেই অভিহিত করিয়া থাকেন। ঢাকা মহানগরীতে বড় বাসের কিলোমিটার প্রতি ভাড়া এক টাকা ৭০ পয়সা। ইহা মিনিবাসে এক টাকা ৬০ পয়সা। আর সর্বনিম্ন ভাড়া বড় বাসে সাত টাকা ও মিনিবাসে পাঁচ টাকা। এই টাকায় কমপক্ষে তিন কিলোমিটার পর্যন্ত ভ্রমণের সুযোগ আছে। কিন্তু এই নিয়ম পদে পদে লংঘিত হইতেছে। মোটরযান আইন অনুযায়ী প্রতিটি গণপরিবহনে ভাড়ার তালিকা দৃশ্যমান স্থানে টানানোর কথা। কিন্তু মানা হইতেছে না এই নির্দেশনাও।
রাজধানীতে মেয়াদোত্তীর্ণ ও জরাজীর্ণ বাসগুলি উঠাইয়া নেওয়ার দাবি বহুদিনের। কিন্তু তাহা বাস্তবে প্রতিফলিত হইতেছে না। এই পুরাতন বাসগুলি উঠাইয়া নিয়া নূতন নূতন বাস চালু করা হইলে রাজধানীর গণপরিবহন ব্যবস্থায় স্বস্তি ও শান্তির দেখা মিলিতে পারে। ভাড়া বাড়ানো হইলেও বাস সার্ভিস যদি আরামদায়ক ও নির্ঝঞ্ঝাট না হয়, তাহা হইলে তাহা নিয়া যাত্রীদের অসন্তোষ থাকাটাই স্বাভাবিক। আশার কথা হইল, সমপ্রতি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র জানাইয়াছেন যে, পাঁচটি কোম্পানির আওতায় রাজধানীতে নামান হইবে চার হাজার নূতন বাস। এই উদ্যোগ দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করিতেছেন রাজধানীবাসী। তবে বাসগুলি শুধু নূতন তথা চেহারা বদল হইলেই চলিবে না, সেইগুলি যাহাতে সুশৃঙ্খলভাবে চলে সেইদিকেও লক্ষ্য রাখিতে হইবে। এইজন্য ম্যানেজমেন্ট বা ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন সাধন করিতে হইবে, যাহাতে যাত্রীদের কোনো প্রকার ভোগান্তি আর পোহাইতে না হয়।