প্রাইম আন্তর্জাতিক :
কাঁদছে মিশর। মাতম চলছে চারদিকে। শুক্রবার পবিত্র জুমার নামাজ আদায় করতে গিয়ে কমপক্ষে ৩০৫ জন মুসল্লি লাশ হয়েছেন। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ১২০ জন। তার মধ্যে আশঙ্কাজনক অবস্থা অনেকের। এই ঘটনায় দেশটিতে তিনদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে।
এদিকে, হামলাকারীদের ওপর প্রতিশোধ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল সিসি। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেয়া বক্তব্যে তিনি বলেন, হামলাকারীদের বিনা শাস্তিতে ছেড়ে দেয়া হবে না। তার ভাষায়, ‘আমাদের শহীদানদের বদলা নেবে সেনাবাহিনী ও পুলিশ। তারা নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা পুনঃস্থাপন করবে।’ এসময় তিনি এই হামলাকে কাপুরুষোচিত ও ‘ক্রিমিনাল’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। প্রেসিডেন্ট সিসি নিহত ও আহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে উত্তর সিনাই প্রদেশের বীর আল আবেদ এলাকায় ওই মসজিতে বোমা ও বন্দুক হামলা করা হয়। নামাজ শেষ হওয়ার পর পরই চালানো এ হামলায় চারদিকে তখন সৃষ্টি হয় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য। মুহূর্তে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন মুসল্লিরা। রক্তে সয়লাব হয়ে যায়। আহতদের আর্তনাদে আকাশ বাতাস ভারি হতে থাকে। সরকারি কর্মকর্তারা বলেছেন, হামলাকারীরা একটি গাড়িতে করে ঘটনাস্থলে পৌঁছে। জুমা নামাজের পর যখন বয়ান চলছিল ঠিক সে সময় তারা হামলা করে। স্থানীয় মিডিয়া বলছে, তারা আগে থেকেই বিস্ফোরক পুঁতে রেখেছিল। তা বিস্ফোরণ ঘটিয়েই মুসল্লিদের ওপর গুলি শুরু করে তারা। এ সময়ে দিকভ্রান্ত হয়ে এলোমেলো দৌড়াতে থাকেন মুসল্লিরা। তখন তাদের ওপর এলোপাতাড়ি গুলি চালানো হয়। মিশরের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচার করা ছবিতে দেখানো হয়েছে, সারি ধরে লাশ শুইয়ে রাখা হয়েছে মসজিদের মেঝেতে। তাদের বেশির ভাগেরই মুখ সাদা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। অন্যদের দেহ ঢেকে রাখা হয়েছে জায়নামাজ দিয়ে। লাশের পাশে বেশকিছু নারী ও পুরুষকেও দেখা গেছে। উল্লেখ্য, এর আগেও সিনাইয়ে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। তাতে টার্গেট করা হয়েছিল নিরাপত্তা রক্ষাকারী ও খ্রিস্টান সংখ্যালঘুদের। তবে এ এলাকায় মসজিদে হামলা হওয়ার ঘটনা বিরল। বীর আল আবেদ মসজিদটিকে তাই হামলাকারীদের টার্গেট করা সহজ হয়েছে। তাছাড়া এটি মূল শহর থেকে বাইরে। এ মসজিদটি সূফীবাদ আদর্শ অনুসরণ করে। ওদিকে, হামলার পর পরই বীর আল আবেদ পাহাড়ি এলাকায় ব্যাপক আকারে বিমান হামলা শুরু করেছে সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনী দাবি করেছে, তাদের চালানো বিমান হামলায় শুক্রবারের ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকজন মারা গেছে।
বিপুলসংখ্যক ‘হামলাকারী’ নিহত
মসজিদে বোমা হামলা ও গুলি করে কমপক্ষে ৩০৫ মুসল্লিকে হত্যার বদলা নিতে মিশরের সেনাবাহিনী সিনাইয়ে একটি পাহাড়ি এলাকায় বিমান হামলা চালিয়েছে। দাবি করা হয়েছে, শুক্রবারের গণহত্যায় জড়িত বেশ কিছু হামলাকারী এতে নিহত হয়েছে। শুক্রবার দিন শেষে একটি বিবৃতি দিয়েছেন সেনা মুখপাত্র তামির রিফাই। তিনি বলেছেন, ঘাতকদের দমন করতে পেরেছে মিশরীয় বিমানবাহিনী। তাদের বেশ কিছু গাড়ি ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। এসব গাড়ি নৃশংস সন্ত্রাসী হামলায় ব্যবহার করা হয়েছিল। এর ভেতরে যারা ছিল তারা নিহত হয়েছে। উল্লেখ্য, উত্তর সিনাইয়ের বীর আল আবেদ শহরে একটি মসজিদে শুক্রবার জুমার নামাজ শেষ না হতেই বোমা হামলা ও গুলি চালায় সন্ত্রাসীরা। এতে কমপক্ষে ৩০৫ জন মুসল্লি নিহত হন। মিশরজুড়ে ঘোষণা করা হয়েছে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক।