নিজস্ব প্রতিবেদক :
চট্টগ্রামে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ‘মাসুদ অ্যান্ড ব্রাদার্সের’ গুদামজাত ৮০ হাজার বস্তা চাল জব্দ করেছে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। পাশাপাশি এক মাসেরও বেশি সময় ধরে চাল মজুদ রাখায় ‘আহমেদ ট্রেডিং’ নামের গুদামটি সিলগালা করে দেওয়া হয়।
বৃহস্পতিবার বিকেলে নগরীর পাহাড়তলী থানার বিসিক সাগরিকা এলাকার ওই গুদামে অভিযান চালিয়ে ৮০ হাজার বস্তায় মজুদ ৪ হাজার টন চাল জব্দ করা হয়। এসময় আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপক মো. তাহেরকেও আটক করা হয়।
টানা তৃতীয় দিনের এ অভিযানে নেতৃত্ব দেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মোরাদ আলী। এসময় নগর পুলিশের কর্মকর্তাসহ কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন (ক্যাব) চট্টগ্রামের নেতারাও উপস্থিত ছিলেন।
জেলা প্রশাসনের দাবি, দাম বাড়িয়ে ক্রেতাদের পকেট কাটার উদ্দেশেই এক মাসের অধিক সময় পরও আমদানিকৃত এসব চাল গুদামে মজুদ করে রাখা হয়েছিল।
প্রসঙ্গত, চালের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টি তদারকি করতে গত মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) অভিযান শুরু করে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের মনিটরিং টিম। প্রথম দিন বন্দরনগরীর সবচেয়ে বড় চালের মোকাম চাক্তাইয়ে অভিযানে গিয়ে ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টদের বাধার মুখে পড়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত। ওই দিন সরকারি কাজে বাধা ও অতিরিক্ত মুনাফায় চাল বিক্রির প্রমাণ মেলায় দুজনকে আটক করা হয়। পরে তাদের মধ্যে মো. দিদারুল আলমকে তিন মাসের কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানা এবং জাহিদুল ইসলাম শাওনকে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত। দ্বিতীয় দিন বুধবার নগরীর মাঝিরঘাটের আড়তে অভিযান চালিয়ে চাল মজুদ রাখার অপরাধে এক দোকানিকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মোরাদ আলী সমকালকে বলেন, ‘চট্টগ্রামের বেশ কিছু আমদানিকারক চাল মজুদ করে রেখেছে—এমন অভিযোগ আছে আমাদের কাছে। এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বিসিক সাগরিকা এলাকার আহমেদ ট্রেডিং নামক গুদামে অভিযান পরিচালনা করে ৮০ হাজার বস্তা চাল জব্দ করা হয়েছে। মাসুদ অ্যান্ড ব্রাদার্স এসব চাল আমদানি করেছিল। নিয়ম অনুযায়ী আমদানিকৃত চাল এক মাসের মধ্যে বিক্রি করার কথা। অথচ প্রতিষ্ঠানটি নির্দিষ্ট সময়ের পরও এসব চাল বিক্রি না করে গুদামে মজুদ করে রেখেছিল। বাজারে চালের দাম বৃদ্ধি করতেই প্রতিষ্ঠানটি এমন অসাধু উপায় অবলম্বন করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘৮০ হাজার বস্তায় ৪ হাজার টন চাল ছিল। প্রতিষ্ঠানটি নিয়মবহির্ভূতভাবে এক মাস ৯ দিন ধরে আমদানিকৃত এসব চাল মজুদ করে রেখেছিল—এমন অপরাধে প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার মো. তাহেরকে আটক করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গুদামটিও সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে।’
এ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘চাল নিয়ে চালবাজি কোনোভাবেই কাউকে করতে দেওয়া হবে না। কেউ যাতে চাল মজুদ করে চালের দাম বাড়াতে না পারে তার জন্য আমাদের টিম মাঠপর্যায়ে কাজ করছে। যেখান থেকেই অনিয়মের অভিযোগ পাচ্ছি সেখানেই আমরা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছি। ইতোমধ্যে বেশ কিছু স্থানে নানা অনিয়মও আমরা পেয়েছি।’
এ অভিযান আগামীতেও অব্যাহত থাকবে বলে জানান জেলা প্রশাসক।